ঢাকা , শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫ , ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমরা দাসত্বের মধ্যে থাকতে চাই না -প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতরা যে কারও বাসায় যেতে পারেন-পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা ক্লাব সংগঠনের ফের মাঠে নামছে এনসিপি আরও কঠিন হচ্ছে আ’লীগের ফেরার পথ বিএনপি চায় সংসদে জামায়াত গণভোটে আমতলীত ও তালতলীতে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, জেলেদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে হাসপাতাল মর্গে বেওয়ারিশ লাশের স্তূপ যানজটে আটকা সড়ক উপদেষ্টা, ১২ কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অফিস করার নির্দেশ রসায়নে নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান আলী রীয়াজের দৈনিক জনতার প্রকাশক ছৈয়দ এম আন্ওয়ার হোসেনের তৃতীয় মৃত্যুবাষির্কী আজ আজ হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ফিফার কমিটিতে বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল আমি আশাবাদী, আমরা ভালো করতে পারব : শমিত সিরিয়ার বিপক্ষে দারুণ জয় পেলো মেয়েরা ভারতের আম্পায়ারই কাল হলো বাংলাদেশের? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করেও জিততে পারলোনা বাঘিনীরা বাংলাদেশ সফরের জন্য টেস্ট দল ঘোষণা দিলো আয়ারল্যান্ড প্রথমবারের মতো মাদ্রাসা ক্রিকেট চালু করতে যাচ্ছে বিসিবি
* আর্থিক মডেল নিয়ে মূল মতবিরোধ, সেটাতে সায় দিচ্ছে না বেবিচক * ২০২০ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের যাত্রীরা উভয় ফি দিচ্ছেন

শাহজালাল টার্মিনালের উদ্বোধন অনিশ্চিত

  • আপলোড সময় : ০৮-১০-২০২৫ ১২:২৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-১০-২০২৫ ১২:২৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
শাহজালাল টার্মিনালের উদ্বোধন অনিশ্চিত
সফট ওপেনিংয়ের দুই বছর পার হলেও অপারেটর চূড়ান্ত করতে না পারায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। বিষয়টি সমাধানের পরই দিনক্ষণ নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে দেশের স্বার্থে তৃতীয় টার্মিনালের অপারেটর চূড়ান্ত করতে ওপেন টেন্ডার দেয়ার পক্ষে মত খাত সংশ্লিষ্টদের। বিগত সরকার ব্যক্তি সুবিধা নেয়ার লক্ষ্যেই অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বলেও অভিযোগ তাদের। অর্থনৈতিক বিবেচনায় টার্মিনালটি চালু করতে টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এর আগে জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, সুমিতোমো, সোজিৎজ ও নরিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্পোরেশনকে নিয়ে গঠিত জাপানি কনসোর্টিয়ামকে বিগত সরকার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলে তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বাছাই করেছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যবস্থাপনার মূল বিষয়গুলোতে দুই পক্ষের মধ্যে মতৈক্য অর্জনে জটিলতা দেখা দেয়।
প্রস্তাবিত ব্যবস্থা অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কনসোর্টিয়ামের তত্ত্বাবধানে দুই বছরের জন্য গ্রাউন্ড সার্ভিসের দায়িত্ব পালন করবে এবং ডেটা সুরক্ষার দায়িত্ব থাকবে বেবিচকের কাছে। কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বে রয়েছে সুমিতোমো। কনসোর্টিয়ামের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মূল মতবিরোধ আর্থিক মডেল নিয়ে। তিনি বলেন, মূলত আমরা আয়-ব্যয়ের যে কাঠামো প্রস্তাব করেছি, সেটাতে বেবিচক সায় দিচ্ছে না। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, টার্মিনালটিকে ঘিরে বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বমানের পরিচালন ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্যই তাদের ব্যবসায়িক মডেলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু বেবিচক এখনও এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের যে পরামর্শক, তারা মূলত ভারতের স্ট্যান্ডার্ডকে সামনে রেখে আয় ও ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। কিন্তু থার্ড টার্মিনাল যেহেতু সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ইকুইপমেন্ট ও ফিউচারিস্টিক ডিজাইন নিয়ে তৈরি হয়েছে, সেহেতু এর ব্যবস্থাপনাগত ব্যয় আঞ্চলিক মানদণ্ডে ধরলে ভারসাম্য থাকবে না। তিনি বলেন, সবচেয়ে লাভজনক দুটি খাত-যাত্রী সুরক্ষা ফি ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি থেকে আয় ভাগাভাগি করতে বেবিচক আগ্রহী নয়। এই দুটি খাতের আয় ছাড়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, বোর্ডিং ব্রিজ বা বাণিজ্যিক দোকান থেকে পাওয়া রয়্যালটির মতো দ্বিতীয় স্তরের আয়ের উৎস দিয়ে পরিচালন ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি। কনসোর্টিয়ামের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাশার সাথে আমাদের আয়ের মার্জিনে খুব একটা পার্থক্য রয়েছে বলা যাবে না। এখনও সমঝোতা হতে পারে বলে আমরা আশাবাদী।
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য ১০০ টাকা ও ৭০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশগুলোর রুটে ৫ ডলার ও ৬ ডলার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গন্তব্যের জন্য ১০ ডলার করে। কর্মকর্তারা বলেন, বিমানের সঙ্গে গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং চুক্তিটি কোনো বড় বাধা নয়। তবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য কনসোর্টিয়াম বেবিচককে অতিরিক্ত একটি সেবাদাতা নিয়োগের কথা বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে। বেবিচকের একজন সিনিয়র সদস্য বলেন, এখনও প্রকল্পের আর্থিক সম্ভাব্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ওদের দিক থেকে স্পষ্ট কোনো রেভিনিউ শেয়ারিং প্রস্তাব আসেনি। আমাদের পক্ষে লাভজনক না হলে তো প্রকল্পে যাওয়ার যুক্তি নেই। তিনি বলেন, এটা পিপিপি প্রকল্প। সেক্ষেত্রে রেভিনিউ শেয়ারিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরা কী পরিমাণ লাভ চায়, সেটা নির্দিষ্ট করে বলেনি। কানেক্টিভিটি, ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন সব মিলিয়েই ওদের দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো মডেলটা এখনও লাভজনক মনে হচ্ছে না।
জানা গেছে, জমকালো আয়োজনে ২০২৩ সালে পুরো কাজ শেষ না হতেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং করে বিগত সরকার। কিন্তু নির্মাণ কাজের ৯৯ শতাংশ অনেক আগে শেষ হলেও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে উদ্বোধন। শেষ সময়ে একদিকে সিভিল এভিয়েশনকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া এবং টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দর কষাকষিতে অন্তর্বর্তী সরকার ও ঋণ প্রদানকারী সংস্থা জাইকা। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান বলেন, আলোচনার একটা পর্যায়ে আমরা আছি। এ মুহূর্তে সেই আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমাদের অপারেটর সিলেকশন হওয়ার পরের ধাপ হবে অপারেশন রেডিনেস টেস্ট। সেই অপারেশন রেডিনেস টেস্টের জন্য আমাদের কয়েক মাস সময় লাগবে।টার্মিনালটি চালু করতে নানা সমীকরণে হিসাব চললেও ওপেন টেন্ডারে অপারেটর নিয়োগের বিকল্প নেই বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, স্বার্থ আদায়ে চুক্তি করা হয়েছে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, এয়ারপোর্ট হ্যান্ডলিংয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাপানের নাম নেই। আমি জানি, সিভিল এভিয়েশনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাপানকে দিয়ে দেয়া হয়েছিল। একটা প্রতিষ্ঠানকে পুরো জিনিস দিতে হবে, এমন কোনো কথা নয়। কিন্তু এটা প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের মাধ্যমে হওয়া বাঞ্ছনীয়। সফট ওপেনিংয়ের পেরিয়েছে দুবছর। এখনো মিলছে না উদ্বোধনের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ। শুরু হয়েছে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ। এমন প্রেক্ষাপটে কালক্ষেপণ না করে স্থাপনাটির বিষয়ে সমন্বিত পদেক্ষপ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। নির্মাণযজ্ঞ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আর বাস্তবতায় ফারাক থাকায় ঋণগ্রস্ত স্থাপনাটি দ্রুত চালুর লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ তাদের। তবে দ্যা বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল হক বলেন, ঋণ পরিশোধের সময় হয়ে গেছে। এটার একটি টাস্কফোর্স করা উচিত। দিনরাত কাজ করে একটা তারিখ দেয়া উচিত। না হয়, এভাবে এভাবে পড়ে থাকলে কোনো দিনই কাজ হবে না। জাপানের সহায়তায় নির্মিত ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এই অত্যাধুনিক টার্মিনালটি বছরে ২ কোটি যাত্রীকে সেবা দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। টার্মিনালটিতে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যাগেজ সিস্টেম ও উন্নত যাত্রী সুবিধা রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে এ টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন হয়েছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা ছিল। তবে সরঞ্জাম আমদানিতে বিলম্ব, নেতৃত্বে পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে সময়সীমা আবারও পিছিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মেয়াদ পার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তৃতীয় টার্মিনাল চালুর জন্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বরকে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯৯.৮৮ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বেবিচক এখন এটি চালুর কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারছে না। বেবিচকের একজন কর্মকর্তা জানান, কিছু সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গেছে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পথে, যা উদ্বেগ তৈরি করেছে। আর্থিক ক্ষতি এড়াতে টার্মিনালটি দ্রুত চালু করার চেষ্টা চলছে। গত ৪ আগস্ট বিমানের একটি ফ্লাইট প্রথমবারের মতো এই টার্মিনালের প্যাসেঞ্জার বোর্ডিং ব্রিজ (পিবিবি) ও ভিজ্যুয়াল ডকিং গাইডেন্স সিস্টেম (ভিডিজিএস) ব্যবহার করে। এয়ারলাইনটি একে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও সেবার মান উন্নয়নের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ঢাকা বিমানবন্দর সূত্র আরও জানিয়েছে, বোর্ডিং ব্রিজ পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে চলছে। টার্মিনালটি সার্বক্ষণিক (২৪/৭) চালু রাখতে চারটি শিফটে ৪ হাজার নিরাপত্তা কর্মীসহ প্রায় ৬ হাজার জনবলের প্রয়োজন হবে। পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে তৃতীয় টার্মিনাল বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা তিনগুণ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা দ্বিগুণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স